অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেফতার


 

নড়াইলে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পারিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যতম আসামি রহমাতুল্লাহ রনিকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নড়াইল সদর থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুলনার ছোট বয়রা নামক স্থান থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার রনি সদর উপজেলার রুখালী গ্রামের মৃত জাবেরের ছেলে। 

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাতপরিচয় অসংখ্য আসামিকেও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর।

এদিকে, গ্রেফতার অপর তিনজনের পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহামুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামিদের সদর আমলী আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত আগামী ৩ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। তাদের রিমান্ড মঞ্জুর হলে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ওইদিনের ঘটনার সার্বিক বিষয়ে তথ্য মিলতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারে মাঠে পুলিশের অভিযান চলছে। 

এর অগে গত ২৭ জুন নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রের আপত্তিকর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনার ৯ দিন পর মামলা দায়ের করে পুলিশ। নড়াইল সদর থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ মোরছালিন বাদী হয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ জনের নামে মামলা করেন। ওইদিন রাতেই এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে আছেন কলেজের পাশের মির্জাপুর বাজারে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সদরের বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মালেক মুন্সীর ছেলে  শাওন মুন্সী। লাল গেঞ্জি পরা ৩০ বছর বয়সী শাওনকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ভিডিওতে চিহ্নিত করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার অন্য দুজন হলেন মির্জাপুর মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম এবং মির্জাপুর গ্রামের সৈয়দ মিলন এর ছেলে সৈয়দ রিমন আলী। 

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় ওরফে বাপ্পী রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে আপত্তিকর পোস্ট করেন। বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কলেজের কিছু ছাত্র তাকে সেটি মুছে (ডিলিট) ফেলতে বলেন। এরপর ১৮ জুন সকালে অভিযুক্ত ছাত্র কলেজে এলে তার সহপাঠীসহ সকল মুসলিম ছাত্র তার গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের দাবি তুলে অধ্যক্ষের কাছে বিচার দেন। কিন্তু তখন ‘অধ্যক্ষ একই সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তাকে রক্ষা করার চেষ্টায় ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন বিষয়টি কলেজের গন্ডি ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ মানুষ কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও কঠোর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ দাবি করেন। অভিযুক্ত ছাত্র ও অধ্যক্ষের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। তখন পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষুদ্ধ জনতা কলেজের শিক্ষকদের ৩টি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। 

এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের উপস্থিতিতে উত্তেজিত জনতা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এসব ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে আসে। এরপর থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ ধরনের পাশবিক উপায়ে অধ্যক্ষকে অপমানিত করা হয়েছে, তাতে সারাদেশের শিক্ষকসমাজ ও শান্তিপ্রিয় জনগণের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ