বন্যায় মৌলভীবাজারে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ


 

দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মৌলভীবাজার জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বিগত ১৬ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে তিন উপজেলায় বেশি বৃষ্টিপাত না হলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জুন থেকে দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়ে যায়। কুলাউড়ার ভূকশিমইল, কাদিপুর ও জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা প্লাবিত। এছাড়া ১২টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় পানি উঠেছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দী লোকজন ঠাঁই নিয়েছেন।

জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমান জানান, জেলায় মোট মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩২০টি। বন্যা কবলিত হয়েছে ৪১টি। পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৬২টিতে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২৯টিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জুড়ী উপজেলায়।

এদিকে জুড়ীর সদর জায়ফরনগর, পশ্চিম জুড়ী ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা বন্যা প্লাবিত। সেখানেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে হাঁটুসমান পানি। প্রতিষ্ঠানের দুইটি ভবনের দোতলায় আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। সেখানে অন্তত শতাধিক পরিবার উঠেছে।

কুলাউড়ার রাবেয়া আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম বলেন, কয়েকদিন আগে সামান্য পানি কমেছিল। তবে এরপর থেকে আর কমছে না। নিচতলার শ্রেণিকক্ষ ও অফিসেও এখনো হাঁটুসমান পানি। কবে যে এ দুর্দশা কাটবে, সেটা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

কুলাউড়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁইয়া জানান, প্রতিদিনই বন্যা প্লাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও পানি কমার খবর মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, জুড়ী কুলাউড়া ও বড়লেখা এলাকায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে তা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু কুশিয়ারা নদীতে এখন পানি বেশি। এ কারণে হাওরের পানি ধীরগতিতে কমছে। এ কারণে দুই উপজেলায় বন্যা প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে না।

জুড়ীর বেলাগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি হাকালুকি হাওর ঘেঁষা এলাকায় পড়েছে। এলাকার সব শিক্ষার্থীদের বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীর পরিবার বিদ্যালয়ের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন।

জুড়ীর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া বললেন, বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পানি আছে। পানি পুরোপুরি না নামলে সেখানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ